রমজান মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। দুনিয়ার কোনো সম্পদের সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। রমজানের আগমনে বিশ্বনবি অনেক আনন্দিত হতেন।
আলোচনায়ঃ হাফেজ ক্বারী আতিক আল হাসানঃ-
সাহাবাদের উদ্দেশ্যে এভাবে ঘোষণা দিতেন বিশ্বনবি সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-أتاكم رمضان شهر مبارك‘তোমাদের দরজায় বরকতময় মাস রমজান এসেছে।’তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের ঘোষণা দিয়ে এ মাসের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করতেন। আর তা ছিল এমন-হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ (বাধ্যতামূলক) করা হয়েছে।
যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের (নবি-রাসুলের উম্মতের) ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩) রমজান মাসের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা১. ফরজ রোজা পালন২. কুরআন নাজিল৩. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার মাস৪. জাহান্নামের দরজা বন্ধ ৫. শয়তানকে শৃঙ্খাবদ্ধ করা৬. লাইলাতুল কদর পাওয়া৭. দোয়া কবুল হওয়া৮. জাহান্নাম থেকে মুক্তি৯. ক্ষমা পাওয়া১০. সৎ কাজের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যাওয়া১১. হজের সাওয়াব পাওয়া১২. রোজাদারের বিশেষ সম্মান ।
রোজা পালন ফরজরমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এ মাসজুড়ে রোজা পালন করা ফরজ। কুরআনুল কারিমের রোজা পালনের নির্দেশ এসেছে এভাবে-فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
কুরআন নাজিলের মাসরহমতের বার্তাবাহী মাস রমজানের অরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি কুরআন নাজিলের মাস। রমজানের এক সম্মানিত রাতে (লাইলাতুল কদরে) আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জীবন পরিচালনার গাইড হিসেবে মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। একাধিক আয়াতে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে– شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِরমজান মাস-ই হল সেই মাস; যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
– وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ – إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَশপথ সুস্পষ্ট (কুরআনের) কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২-৩) – إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ‘আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি শবে-কদরে।’ (সুরা কদর : আয়াত ১)
জান্নাতের দরজা খুলে দেয়ার মাসরমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। রমজানের সম্মানে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ মাসর বরকত লাভে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)এ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম ফলাফল হলো- রমজান মাসে মানুষ ধর্ম-কর্ম ও নেক আমলের দিকে বেশি তৎপর হয় এবং নতুন-পুরাতন সব মানুষকেই মসজিদমুখী হতে দেখা যায়।
ইউটিউব লিংকঃ ক্লিক করুন
লাইলাতুল কদরের মাসএ মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ‘লাইলাতুল কদর’। রাতটি হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে কুরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে। রমজানের শেষ দশকের বেজোড় যে কোনো একটি রাতই ‘লাইলাতুল কদর’।
আল্লাহ তাআলা বলেন– وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ – إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَশপথ সুস্পষ্ট (কুরআনের) কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২-৩) – إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ- وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ – لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ – تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ – سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ‘আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন কি লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সুরা কদর : আয়াত ১-৫)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে রমজান মাস আগমন করেছে। … এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল।’ (নাসাঈ)
দোয়া কবুল হওয়ার মাসরমজান মাসের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেন বলে জানিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-‘রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর সমীপে দোয়া করে। আর তা কবুল হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহামদ)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাসএ মাসকে তিন দশকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ দশক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘আল্লাহ তাআলা (রমজান মাসের) প্রতি রাত ও দিনে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা করেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া ‘মোনাজাত’ কবুল হয়ে থাকে।’ (মুসনাদে আহামদ)
আরও পড়ুনঃ বিশ্বে-করোনা-ভাইরাস